খেজুরের রস ও অন্যান্য কবিতা

খেজুরের রস ও অন্যান্য কবিতা

খেজুরের রস

শেষ কবে খেজুরের রস খেয়েছিলাম এখন আর মনে পড়ে না।
সেদিন কি খুব শীত পড়েছিল? আগুন পোহাচ্ছিলাম?
গায়ে চাদর ছিল নাকি জ্যাকেট? নাকি উলে বোনা সোয়েটার?
ওই সময় সঙ্গে কারা ছিল, কোনো টিয়া নাকি কাঠঠোকরা?

সঙ্গীরা কেউ কি এরই মধ্যে প্রয়াত?

এবারের শীতে আমাদের খেজুর গাছগুলোতে
কোনো রসের হাঁড়ি বসানো হয়নি।

আমাদের গ্রামে খেজুর গাছগুলো কুয়াশা হয়ে গেছে!

ব্লাকর্বোড

ব্লাকবোর্ডে নক্ষত্র আঁকতে আঁকতে মহাকাশে চলে যাই।

শূন্যতায় নৃত্যরত অন্ধ সমুদ্র,
গন্ধবণিকের জাহাজ ভিড়বে ঘাটে।

জাহাজে আসছে পৃথিবীর জাতীয় পতাকা।

পতাকাটি যেদিন জাতীয় বলে স্বীকৃতি পেল
দেশপ্রেমিক বেড়ালে ভরে গেল সিনেমা হল।

পৃথিবীকে এবার
সৌরজগতের ‘জাতীয় গ্রহ’ ঘোষণা দেবে জাতিসংঘ।

হায়, সৌরজগৎ পেরুলেই অসীম সীমা, নিস্তব্ধতা।

সুঁইয়ের যোনী দিয়ে মহাজগৎ যায়, আসে
লেখাপড়া শিখে কেবলি মনে-মননে ক্রীতদাসের ক্রীতদাস হাসে।

মঙ্গলকাব্য

দুরবিন পেতেছি সন্ধ্যা শেষের ছাদে।

সকল নক্ষত্রের নামকরণ করা হয়নি এটা বুঝে
বহু নক্ষত্রের নামকরণ করি নিজে।

আমার বাড়িতে
নক্ষত্র দেখতে আসে কালকেতু আর ফুল্লরা।

কাঠকুড়ানির বনে
আগুন লাগিয়ে আসা বণিক হাততালি দেয়।

আমাকে ডাকে
মহাকালের ঠোঁটকাটা নদী আর ছোট্ট টঙ ঘর।

নক্ষত্র চেনার বই আমার হারিয়ে গেছে খেজুর তলার হাটে!

জ্ঞানী

তোমাকে তর্ক করতে দেখি টেলিভিশনে, তুমি ভালো আছ?

জানা গেছে, জ্ঞানী লোক চাঁদে থাকে।
উড়ন্ত ফুলের দোকানে রাখা
দূরের তারার টক দই।

‘সকল প্রশংসা আল্লাহর’
এ কথা লেখা দেখি পাবলিক বাসের পিঠে।
ফুলের গন্ধ দিয়ে মালা গাঁথতে গাঁথতে ঘুমাই আয়নার ভেতর।
নিজেকে সৃষ্টি করিনি নিজে, জোটেনি তাই আত্মহত্যার অধিকার।

জ্ঞানী লোক দেখতে
কতিপয় জেব্রা ধূসর শীত-রাতে তাকায় আকাশে।

শয়তানের মতো ভালো ছাত্র

হয়েছ গতিশীল, হওনি প্রগতিশীল,
পুরনো সমস্যা নিয়েছে বিদায়
নতুন সমস্যা স্বাগতম;

করপোরেট অফিস চালাচ্ছেন
মেধাবী সব র‍্যাগিং মাস্টার।
খাঁচাবন্দি করছেন
কাছের কিংবা দূরের আকাশ।

ওহে ঝাউগাছ,
ভালো ছাত্ররা কেন আর
কাজে লাগে না গণমানুষের?

বাংলার মেধাবীরা সব শয়তানের মতো ভালো ছাত্র!

জলরঙ : ১৬

এই আমি
ওই আমি
এক না;
তিড়িং-বিড়িং
লাফায় দেখো বকনা।

গাছ মানেই জানি
এক পায়ে দাঁড়ানো।
দীর্ঘায়ু মানেই
প্রিয়জন হারানো।

সকল দুপুর
বিকালের পানে ছোটে।
সকল সন্ধ্যায়ই
সন্ধ্যাতারা ওঠে।

ঘাস দিয়ে ঢাকা
শত সূর্য রাখা।
থালাভরা তারাগুলো
গল্প দিয়ে মাখা।

সব কিছু হচ্ছে আঁকা
কবরের পাশে ক্যামেরা রাখা!

Loading

Leave a Reply

Skip to toolbar