
হাউজ হাজব্যান্ড
পান্থপথের ফুটপাত দিয়ে যাচ্ছিলাম। ফার্নিচারের দোকান থেকে কে যেন ডাক দেয়–স্যর, দাঁড়ান…।
আরে আবু মিয়া! এখানে কী করছো?
ডাইনিং টেবিল কিনতে আইছি, স্যার। কিন্তু এতো চড়া দাম! মনে হইতাছে, কাওরান বাজার থেইকা শীতল পাটি লয়া যাই।
তুমি গরিব মানুষ। টেবিল দিয়ে কী করবা!
কি যে কন, স্যার! আমার ওয়াইফ পিংকি বেগম ঝাকানাকা গার্মেন্টসের সুপারভাইজার। তার একটা স্টাটাস আছে না!
তার মানে, তুমি পুটির মাকে ছেড়ে আরেকটা বিয়ে করেছো!
আবু মিয়া হাসে–জ্ঞানি লোকের বুঝতে ভুল হয় না। দোয়া করবেন। আমার দুই কন্যা। নিমকির বয়স দশ। ঝিমকি সবে পয়দা হইলো।
আমি চিন্তিত হই–তাইলে পুটি, পুটির মা; ওদের কী অবস্থা?
আবু অশ্রাব্য গালি দিয়ে বলে–থোন অগো কথা। ঐ কাজের বেটির লগে থাইকা জীবন নষ্ট করুম নাকি! আমার ভবিষ্যত আছে না!
আমার সঙ্গে চা-টা খেয়ে একটা প্লাস্টিকের টেবিল আর চারটা চেয়ার কিনে ভ্যানে চড়ে নতুন ওয়াইফের বাসায় ফেরে আবু মিয়া। ওর সত্যি উন্নতি হইছে। বস্তুি ছেড়ে বিল্ডিংয়ের ছয় তলায় থাকে। প্রয়োজন ছাড়া নিচে নামে না। ড্রয়িংরুমে বসে টিভি দেখে আর পিংকির আগের ঘরের মেয়ে নিমকির সঙ্গে টালটি-বালটি করে। রাতে পিংকি গার্মেন্টস থেকে ফিরলে একদম ভেজা বিড়াল হয়ে যায়।
আবু এমন বাপ, খালি ঘর পেয়ে নিমকিকে কোলে বসিয়ে আদর করে। নিমকি রজস্বলা মেয়ে। বিব্রত হয়ে প্রায়ই বলে–আব্বু, আমার লগে এরাম করবা না। মারে কয়া দিমু।
আবু ধমক দেয়–ঐ কুত্তার বাচ্চা, কী কবি! বেশি বাড়বি তো ঘর থেইকা বার কইরা দিমু। যা। বাথরুমে ঢুইকা ঝিমকির মুতের কাঁথাগুলা ধুইয়া ফালা।
ঊঠতে-বসতে মেয়েকে গালমন্দ করে পিংকি। স্ত্রীর সঙ্গে সুর মিলিয়ে আবু বলে–দেখো, দেইখা যাও। ঘরঝাড়ু দিয়া কুত্তার বাচ্চায় ময়লাগুলা কোনায় জমায়া রাখছে।
মহল্লার লোকজন জানে, আবু বিদেশ-ফেরৎ। ওদের যে এটা দ্বিতীয় সংসার, একথা দুজনে চেপে যায়। আবুকে সবাই ডাকে, নিমকির বাপ।
ভালো চলছিল আবু মিয়ার নতুন সংসার। গোল বাঁধায় নিমকির নানী। বুড়িকেইবা কী দোষ দিই! আদর করতে করতে মেয়ের তলপেটের নিচে হাত ঢুকিয়ে দিয়ে আবু নিজে কেলেঙ্কারি কান্ড ঘটিয়ে ফেলে। হকচকিয়ে গিয়ে নিমকি বাথরুমে ঢুকে কাঁদতে শুরু করে। ওর কান্না শুনে ঝিমকিও ট্যা-ট্যা জুড়ে দেয়। ট্যা-ট্যা থামাতে না পেরে ফিডারের দুধের সঙ্গে ঘুরের অষুধ মিশিয়ে দিয়ে খাওয়াতে খাওয়াতে বাপ-বেটি দুজনে ঘুমিয়ে পড়ে। এই সুযোগে নিমকি মেইন গেট খুলে নানীর বাসার দিকে ছুট লাগায়। সব শুনে বুড়ি তেলে-বেগুনে হয়ে বলে–তবাস্তাগ ফেরুল্লা। বাটপারটারে আইজ আমি জবাই কইরা ফালামু…।
নয়া জামাইকে বুড়ি খুন করে না বটে: মাগরিবের ওয়াক্তে এসে এমন দক্ষযজ্ঞ বাঁধিয়ে দেয়, বিল্ডিংয়ের লোকজন ছিছি করে আর মিটমিটিয়ে হাসে। আবুর এমন দূর্ভাগ্য, ঐদিন পিংকি আগে আগে গার্মেন্টস থেকে ফেরে। বাসার সামনে জটলা দেখে বলে–কী ব্যাপার। কী হইছে?
পাশের ফ্লাটের মহিলা বলে–আপনার হাজব্যান্ডকে জিঞ্জাস করেন। যত্তোসব অসভ্যতা।
নিমকি নানীর বাসায় চলে যাওয়ায় সংসারটা আবুকেই সামলাতে হয়। রাতে খেতে বসে পিংকি ঝংকার দিয়ে ওঠে–তোমাকে না কতোবার বলছি, ফরেন পাঙ্গাস আমি খাই না…।
আবু মন খারাপ করে বলে–আচ্ছা, তোমাকে ডিম ভেজে দিতেছি। রান্নাঘরে কাজ করতে করতে বলে–শোনো, একটা কাজের মেয়ে রাখি। ঝিমকির লগে খেলতে পারবে।
পিংকি কটমট করে তাকায়।
আবু আমতা-আমতা করে বলে–তাইলে একটা ছেলে রাখি।
পিংকি এবার তেড়ে আসে–ঘটনা কী! পোলাপানের পাছা মারার শখ জাগছে! খাইটা খাও।
কথায় বলে, দুধের মধ্যে একফোটা চনা পড়লে কম্ম সারা। জীবনভর পুটির মাকে কাজের ছেড়ি কয়া গাইল পাড়তে পাড়তে এখন নিজেই পিংকি ম্যাডামের কাজের ছ্যাড়া হয়া গেছে! সব কপালের ফ্যার।
নিমকির ঘটনার পর আবুর মনে হয়, আড়ালে সবাই তাকে ভাদাইম্যা বলে ভেংচি কাটে। কিন্তু এই উপদ্রব থেকে মুক্তির পথ পায় না। গলির জলাবদ্ধতা হঠাৎই বাঁচার উপায় বাতলে দেয়। অফিসে যাওয়ার পথে রিক্সা উল্টে নোংরা জলে পড়ে যায় পিংকি। স্ত্রীর দুর্দশায় উত্তেজিত হয়ে আবু বলে–এই ফকিন্নি মহল্লায় আর কতদিন থাকবা! চলো, ভাল এলাকায় যাই।
পিংকি বলে–যাইতে যে চাও, বাড়িঅলার বকেয়া দিতে পারবা? সেই মুরোদতো নাই।
আবু তবু আশা ছাড়ে না। অনেক অনুনয়-বিনয়ের পর পিংকি রাজি হয়–তাইলে খুঁইজা দেখো। আমার কিন্তু টাইম নাই।
ঘরে তালা দিয়ে ঝিমকিকে কোলে নিয়ে বাসা খুঁজতে বের হয় আবু। বাপের কোলে চড়ে মেয়েটা এদিকে-ওদিকে তাকায়। আবু বলে–বুঝলি ঝিমকি, মানি লোকের মান আল্লায় রাখে। এইবার গুলশানে বাসা নিমু।
ঝিমকি খুশিতে পুৎ পুৎ করে পাদ মারে। মেয়ের পাছায় আঙ্গুল ঘষে নাকের কাছে নিয়ে আবু বলে–এই কুত্তার বাচ্চা, সাবধান। হাগবিতো পুটকীতে তালা মাইরা দিমু।
আবুর সঙ্গে আবার দেখা হয় মহাখালি বাসস্ট্যান্ডে। কোলের বাচ্চা দেখে অনুমান করি, এ নিশ্চয় ঝিমকি।
আবু বলে–আপনি জ্ঞানি লোক। চিনতে ভুল করেন নাই।
তো। এদিকে কোথায়?
বাসা ভাড়া করলাম।
কোনখানে?
গুলশানে।
বলো কী!
আবু হাসে–জী স্যার, আমার ওয়াইফ স্টাটাস মেনটেইন করে। জানেনতো উনি সার্ভিস হোল্ডার।
আমি বলি–আমার ছোট ভাইয়ের বাসাতো বাড্ডায়। ও বুঝতে পারছি, তুমি বাড্ডায় বাসা নিছো। বাড্ডাতো গুলশান থানার মধ্যে। খুব চালাকি…!
আবু হাসে–মূর্খ হইলেও জ্ঞান খাটায়ে চলতে চাই, স্যার।
ভাড়ার অংক শুনে বেঁকে বসে পিংকি। আবু এবার কেঁদে ফেলে–তুমি কামাই-রুজি করো। টাকার গরম দেখাইতে পারো। আমি যে সংসারের পিছে খাইটা মরি, তার কী কোন দাম নাই!
পিংকি সুর নরম করে বলে–আচ্ছা ঠিক আছে। মাল-সামান লয়া যাইতে পারবাতো? আমার কিন্তু টাইম নাই।
ঝিমকিকে কোলে নিয়ে গেটের সামনে দুইটা ঠেলাগাড়ি লাগিয়ে ছয়তলা থেকে মালপত্র নামায় আবু। পড়শিরা জানতে চায়–কই যাইতাছেন, নিমকির বাপ?
গুলশান।
এক নম্বর না দুই নম্বর?
চৌদ্দ নম্বর। যত্তোসব।
মালসামানা উঠিয়ে ঠেলাওয়ালারা বলে–এইবার রওনা দিই, ভাই।
চিন্যা যাইতে পারবা?
আপনে লগে গেলে ভালো হয়।
আবু মিয়া ঠেলাগাড়ির মাঝখানে ঝিমকিকে নিয়ে বসে। এমন দুর্ভাগ্য, তখনি নিমকি আর ওর নানী দোতলার বারান্দায় এসে ফেরিঅলার সঙ্গে আদা-রসুনের দরদাম করে। আবুকে দেখে বুড়ি জানতে চায়–কই যাইতাছেন, জামাই বাবাজী; কয়া যাইবেন না?
আবু মেজাজ খারাপ করে বলে–আপনার মাইয়ার কাছ থেইকা জাইনা লইয়েন।
নিমকি হাসতে হাসতে বলে–ও আব্বু, ঝিমকিরে লয়া যাইতাছ; আমারে নিবা না!
আবুর কান দিয়ে ধুয়া ছোটে। ঠেলাওয়ালাদের তাড়া দিয়ে বলে–ঐ মিয়ারা, জোরে টানো।
ঠেলাওয়ালারা বলে–আর কত জোরে টানুম! আমরা বলদ না; মানুষ। 🌼
SHABBIR AHAMED
অনেক শুভ কামনা রইল!
SHABBIR AHAMED
অনেক শুভ কামনা রইল!
SHABBIR AHAMED
কবি আপনাকে শুভকামনা জানাই